আনসারীর জানাজায় জনসমুদ্র, প্রশাসনের অসহায়ত্ব প্রকাশ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বারবার নিষেধ করা হচ্ছে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছে না সাধারণ মানুষ। ১১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও শনিবার (১৮ এপ্রিল) এই লকডাউন ভেঙেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশের নায়েবে আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজার নামাজ। যদিও প্রশাসন বলছে ‘ধর্মীয় নেতারা আশ্বস্ত করেছিলেন সীমিত পরিসরেই জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।’
শনিবার সকাল ১০টায় সরাইল উপজেলার বেড়তলা এলাকার জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মাঠে জায়গা না হওয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অন্তত দুই কিলোমিটার অংশে জানাজার নামাজ পড়েন মানুষজন। জানাজা জনশ্রোতে পরিণত হওয়ার বিষয়টি ‘আঁচ করতে পারেনি’ পুলিশ।
সরাইল থানার ওসি সাহাদাত হোসেন জানান, জানাজায় এতো মানুষ হবে সেটি আমরা বুঝতে পারিনি। লোকজন আসতে শুরু করার পর আমাদের আর কিছু করার ছিলো না।
সামাজিক দূরত্ব না মেনে জানাজায় এত মানুষের সমাগমের কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। জানাজায় অংশ নিতে বিভিন্ন স্থান থেকে অটোরিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক্টর ও ট্রাকে করে মানুষজন এসে জড়ো হন। অনেকে জেলা শহর থেকে পায়ে হেঁটেও জানাজার মাঠে গিয়েছেন।
এদিকে লকডাউনের কারণে রাস্তায় জনসাধারণের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে জেলার বিভিন্ন সড়কে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়েছে জেলা পুলিশ। এখন প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের এই নিরাপত্তা চৌকি পেরিয়ে কীভাবে লকডাউন ভেঙে এতো মানুষের সমাগম হলো জানাজায়? প্রশাসন কী করেছে? বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বৃহৎ আকারের এই জানাজার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নাগরিক সংগঠনের নেতারা। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে শনিবার (১৮ এপ্রিল) পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন দুইজন।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বিবেককে কবর দিয়ে আবেগে কাজ করি। এটি (জানাজা) একটি উদাহারণ। এখন আবেগ দেখানোর কোনো অবকাশ নেই, সারাবিশ্ব এখন থমকে গেছে। আর জানাজার জন্য এমন দলে দলে লোক আনছে। আমাদের বাঁচার জন্য নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাড়ি থেকে দোয়া করলে কি দোয়া হবে না? প্রশাসনের এটি দেখার দরকার ছিল। যখন দেখছে প্রচুর মানুষ আসছে তখনই বাধা দেয়ার দরকার ছিল।
তবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মঈনুল ইসলাম খন্দকার বলেন, জানাজার এই জনশ্রোত হুজুরের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। আমরা ভাবিওনি এতো মানুষ হবে। আর লোক বেশি হওয়ার জন্য আমরা দুপুরে জানাজা করতে পারতাম। লেকডাউনের কারণে আমরা জানাজার জন্য ছোট জায়গা বেছে নিয়েছি। মাদরাসার জায়গাটি ছোট। কিন্তু এরপরও লোকজন এসেছে, আমরা তো তাড়িয়ে দিতে পারি না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আমরা ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছিলাম। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছিল করোনা পরিস্থিতির কারণে সামজিক দূরত্বের বিষয়টি বজায় রাখবে। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন গিয়েছে। অনেকে ধর্মীয় বিষয়ের কথা বলেছে সেক্ষেত্রে কাউকে তো জোর করে পুলিশ গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে পারে না। পুলিশের পক্ষ থেকে লাঠিচার্জ করে কিংবা জোরপূর্বক কিছু করার সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, তারা আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। বর্তমানে লকডাউন পরিস্থিতি চলছে। সাজিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) তাদেরকে আমরা জানিয়ে দিয়েছি এবং তারা আমাদেরকে জানিয়েছে নির্ধারিত নিয়ম মেনেই সীমিত পরিসরে তাদের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। এখন প্রকৃত বিষয়টি কী আমাকে খতিয়ে দেখতে হবে।
চিত্রদেশ// এস//