অংশ নিচ্ছে না ৫ দেশ, বাতিল হতে পারে এবারের হজ
স্টাফ রিপোর্টার:
বিদ্যমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার হজে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ব্রুনাই ও থাইল্যান্ড। ফলে এ অবস্থায় হজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ভাবছে সৌদি আরব। যদিও মাত্র কয়েকদিন আগেই সীমিত পরিসরে হজ পালনের কথা জানিয়েছিল সৌদি। তবে এ অবস্থান থেকে থেকে সরে যাওয়ার আভাস পাওয়া গেছে।
সৌদি আরবের হজ এবং উমরাহ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সূত্রে এই খবর দিয়েছি ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস।
এদিকে করোনার সংক্রমণের আশঙ্কা ও এর ভ্যাকসিন না থাকার কারণে মালয়েশিয়ার নাগরিকদের এ বছর হজ পালনে নিষেধাজ্ঞা জারির কথা নিশ্চিত করেছেন দেশটির ধর্মমন্ত্রী জুলকিফলি মোহাম্মদ আল-বাকরি। তিনি বলেন, আমি আশা করি হজে যেতে আগ্রহীরা ধৈর্য ধারণ করবেন ও সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। পৃথক এক বিবৃতিতে দেশটির তাবুং হজ বোর্ড জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে এ বছরের জন্য নির্বাচিত ৩১ হাজার ৬০০ মানুষের হজযাত্রা বাতিল হতে পারে।
এর আগে গত সপ্তাহে বিশ্বের সবচেয়ে মুসলিম প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়া এ বছর নিজ দেশের নাগরিকদের হজযাত্রা বাতিল করে। এতে করে ২ লাখ ২১ হাজার মানুষের হজযাত্রা বাতিল হয়।
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ধারাবাহিকতায় একইরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রুনাই ও সিঙ্গাপুর। ব্রুনাই সরকারের এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বর্নিও বুলেটিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ব্রুনাই হজযাত্রীদের আগে নিবন্ধিত হওয়া সত্ত্বেও আসন্ন হজের প্রস্তুতি বাতিল করেছে।
একই কারণে থাইল্যান্ডের মুসলমানদের জন্য এ বছর হজ স্থগিত করা হয়েছে। থাইল্যান্ডের ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছর হজের জন্য মোট ৮ হাজার মুসলমান নিবন্ধন করেছিলেন। তবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ৫ হাজার ৭শ’ জন পরবর্তী বছর হজপালনের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে এক হাজার জন হজযাত্রা বাতিল করেছেন। চলতি বছর মাত্র ১ হাজার ৩শ’ জন হজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তাই সামগ্রিক বিবেচনায় দেশটি হজযাত্রা বাতিল করেছে।
সৌদি সরকারের সূত্রের বরাত দিয়ে ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস জানায়, পুরো ব্যাপারটি খুবই সতর্কভাবে ভাবা হচ্ছে এবং নানা ধরনের পরিস্থিতি এখানে বিবেচনা করা হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জুলাইয়ের শেষের দিকে এবার হজের দিনক্ষণ পড়েছে। বিশ্বমুসলিমের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েতটি ঘটে সৌদি আরবের মক্কায় কাবা শরিফকে কেন্দ্র করে। এসময় দুই মিলিয়নেরও বেশি মুসলিম বিভিন্ন দেশ থেকে সৌদি আরবে ভ্রমণ করে।
তবে কয়েকদিন আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, সীমিত পরিসরে হজ পালনের সিদ্ধান্তের কথা ভাবছে সৌদি আরব। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশ থেকে যে পরিমাণ হজযাত্রী যাওয়ার কথা অন্যান্যবারের তুলনায় এবার তার ২০ শতাংশ মানুষ আসতে অনুমতি দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ায় হজ নিয়ে আশঙ্কার মুখে পড়ে গেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে কিছু কর্মকর্তা সৌদি শীর্ষ মহলকে চাপ দিচ্ছে হজ বাতিলের জন্য।
ধর্মীয় গুরুত্ব ছাড়াও সৌদি আরবের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে এই হজ। প্রতি বছর হজ ও উমরাহ থেকে ১২ বিলিয়নেরও বেশি ডলার আয় করে দেশটি।
এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয় সৌদি আরব। মার্চের শুরুতে বিদেশি নাগরিকদের জন্য মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ পালন ও ধর্মীয় সব কর্মকাণ্ড বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল সৌদি আরব, এমনটি আগে কখনো দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হজ মিশন কাউন্সিলর মাকসুদুর রহমান জানান, তারা এ ব্যাপারে নিরবচ্ছিন্নভাবে সৌদি সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সৌদি সরকার হজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে নাইজেরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ এ ব্যাপারে নিজেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে এ বছর হজ করতে সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জনের। এর মধ্যে ১৭ হাজার ১৯৮ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং এক লাখ ২০ হাজার জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়ার কথা ছিল।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবারের হজ আগামী ৩০ জুলাই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, কোনও মহামরির কারণে প্রথম হজ বাতিলের ঘটনা ঘটে ৯৬৭ সালে। ওই সময় প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল।
চিত্রদেশ//এস//