অর্থ-বাণিজ্যপ্রধান সংবাদ

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের ৫৪২৭ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার:
সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) কিছু বাংলাদেশির প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। ২০১৯ সাল শেষে বাংলাদেশিদের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৯০ টাকা হিসাবে।

তবে আগের বছরের তুলনায় ২০১৯ সালে জমাকৃত টাকার পরিমাণ ১৩২ কোটি টাকা কমেছে। ২০১৮ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। টাকার পরিমাণের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

বৃহস্পতিবার সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কোনো বাংলাদেশি যদি তার নাগরিকত্ব গোপন রেখে টাকা জমা করে থাকে,তার তথ্য এই প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।এই ধরনের আমানতসহ বাংলাদেশীদের মোট জমা টাকার পরিমাণ হতে পারে আরও বেশি।

বাংলাদেশ থেকে যেহেতু বৈধভাবে টাকা পাঠানোর সুযোগ নেই,তাই ওই সঞ্চয়ের পুরোটাই অবৈধ। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য পণ্যমূল্য বাড়িয়ে-কমিয়ে দেখিয়ে (Over Invoicing –Under Invoicing)পাচার করা অর্থ, হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে বেপরোয়া কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের একটা অংশ সুইস ব্যাংকে জমা হয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ২০০৬-২০১৫ সাল পর্যন্ত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের প্রায় সমান।

একক বছর হিসাবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ১৫১ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে ৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪টি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি পণ্যের আমদানিমূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানিমূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা। এ ছাড়া টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশই কোনো-না-কোনোভাবেই পাচার হচ্ছে। টাকা পাচারের তথ্য এসেছে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির রিপোর্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজে প্রকাশিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে।

সূত্র বলছে, দুর্নীতি ও চোরাচালানের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। ওইসব টাকায় দুর্নীতিবাজরা বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলছেন, জমা রাখছেন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এর বাইরে আরও অনেক ব্যাংকে বাংলাদেশের পাচারকারীদের টাকা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে মালয়েশিয়া সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ান সরকারের সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী।

দেশ থেকে বিদেশে কোনো টাকা নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। কিন্তু এ পর্যন্ত কাউকে ব্যাংক থেকে এই ধরনের কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। তারপরও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় কীভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ হল। কানাডায় রয়েছে বাংলাদেশি অধ্যুষিত অঞ্চল বেগম পাড়া।

এ ছাড়া ব্রিটেন, হংকং, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ব্যাংকেও বাংলাদেশিদের টাকা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

চিত্রদেশ //এল//

Related Articles

Back to top button