খােজঁ-খবরপ্রযুক্তি

‘সবার ঢাকা’ অ্যাপসে অভিযোগ করলেই সমাধান

স্টাফ রিপোর্টার:
মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের ৩ নম্বর অ্যাভিনিউতে দুই মাস ধরে সড়ক বাতি জ্বলে না। অন্ধকার রাস্তার ছবি তুলে গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে এ সমস্যার কথা জানান স্থানীয় বাসিন্দা তানজিম ইসলাম। পরদিনই সেখানে বাতির ব্যবস্থা করে ডিএনসিসি।

খিলগাঁওয়ের ফুটপাতে দীর্ঘদিন ধরে একটি স্লাব ভেঙে ছিল। ওই পথে চলতে গিয়ে অনেককেই হোঁচট খেতে হয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় ম্যানহোলে পড়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। গত ২৬ জানুয়ারি দুপুরে এমন সমস্যার কথাও ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে জানান কাজী আসিফ রহমান নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা। সেদিন বিকেলেই এ সমস্যার সমাধান করেন ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ এর প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা।

এভাবেই ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে ডিএনসিসি। গত ১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এ অ্যাপটি চালু করে ডিএনসিসি। এখন এই অ্যাপের মাধ্যমে নগরবাসী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সেবা নিতে পারছেন। নাগরিক সেবাপ্রাপ্তি এবং মেয়রের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুযোগ করে দিয়েছে এই ডিজিটাল মাধ্যম। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা।

অ্যাপটি পরিচালনা করছে ডিএনসিসির আইটি বিভাগ। এ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত নাগরিকরা ২১৩টি সমস্যার কথা এ অ্যাপের মাধ্যমে জানান। এর মধ্যে ১১৮টি সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। বাকি ৯৫টি সমস্যা ক্রমান্বয়ে সমাধান করা হচ্ছে। তাৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব, এমন সমস্যাগুলো সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান করা হচ্ছে।

গত ১৭ জানুয়ারি খিলক্ষেতের নামাপাড়া এলাকায় মশার উপদ্রব নিয়ে ‘সবার ঢাকা’র মাধ্যমে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা সোহান। তিনি অ্যাপে লেখেন, ‘খিলক্ষেত নামাপাড়া এলাকায় মশার যন্ত্রণায় আমরা অসহায়। অলিগলিতে ওষুধ ছিটানো হয় না বহুদিন। অনুগ্রহ করে ব্যবস্থা নিন।’

অভিযোগ পেয়ে পরদিন থেকে ওই এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটাচ্ছেন ডিএনসিসির মশক কর্মীরা।

 

খিলক্ষেতের নামাপাড়া এলাকায় মশার উপদ্রব নিয়ে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে অভিযোগের পর সেখানে নিয়মিত ওষুধ ছেটানো হচ্ছে

এ বিষয়ে অ্যাপের সেবাগ্রহীতা সোহান জানান, অ্যাপে সমস্যার কথা জানানোর পরপরই তার মোবাইল ফোনে কল দেন ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা। এখন থেকে ওই এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। সে অনুযায়ী মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘ওই এলাকার ডোবা-নালায় প্রচুর পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা স্তূপ হয়ে রয়েছে। সেখান থেকে মশা জন্মাচ্ছে। এসব আবর্জনাও ডিএনসিসিকে পরিষ্কার করতে হবে।’

জানতে চাইলে ডিএনসিসির সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. তুহিনুল ইসলাম বলেন, ‘নাগরিকদের সঙ্গে ডিএনসিসির সংযোগ স্থাপন করতেই এ অ্যাপটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। এখন কেউ অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিকভাবে তা সমাধানের চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেবা পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন নাগরিকরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মোট ৮৭টি সমস্যার কথা জানিয়েছেন নাগরিকরা। এর মধ্যে ৪০টি সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। বাকি ৪৭টি সমস্যা ক্রমান্বয়ে সমাধান করা হবে। এর মধ্যে কিছু সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি এবং সময়সাপেক্ষ।’

মোবাইল ফোনে ইনস্টল
যে কোনো অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযুক্ত করে ফোনের প্লে স্টোরে ‘Shobar Dhaka- Citizen portal for DNCC’ নামে সার্চ করলে অ্যাপটি পাওয়া যাবে। ১১ মেগাবাইটের অ্যাপটি ডাউনলোডের পর ভাষা নির্বাচন করে মোবাইল ফোনের নম্বর ভেরিফিকেশন করে নিতে হবে। তারপর ব্যবহারকারী তার নাম ও লোকেশন অ্যাকসেস দিয়ে অ্যাপটির মূল ইন্টারফেসে প্রবেশ করবেন।

যেভাবে কাজ করবে অ্যাপটি
অ্যাপটিতে রাস্তা, মশা, আবর্জনা, সড়ক বাতি, পাবলিক টয়লেট, নর্দমা, অবৈধ স্থাপনা নামে পৃথক বিভাগ থাকবে। ব্যবহারকারী যেকোনো বিভাগ নির্বাচন করে সে সম্পর্কিত সমস্যা ও পরামর্শ জানাতে পারবেন। যেমন- রাস্তা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা বা পরামর্শ জানাতে ‘রাস্তা’ নামের বিভাগে ট্যাপ করলে একটি ফর্ম চলে আসবে।

 

খিলগাঁওয়ে একটি ম্যানহোলে পড়ে অনেকেই আহত হয়েছেন, ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে অভিযোগ জানানোর পর সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে

সেখানে সংশ্লিষ্ট ছবি, ঠিকানা, সমস্যার ধরন ও বিস্তারিত লেখার অপশন থাকবে।

এগুলো ঠিকঠাক ভাবে পূরণ করে দিলে সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাহী প্রকৌশলী ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে তথ্য চলে যাবে। একইভাবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, বর্জ্যের জন্য বর্জ্য কর্মকর্তা, অবৈধ স্থাপনার জন্য সম্পত্তি কর্মকর্তার কাছে এ অ্যাপের মাধ্যমে সমস্যা বা পরামর্শ জানানো যাবে।

নাগরিকরা অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে তা পৌঁছে যাবে সিটি করপোরেশনের কাছে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিনে সমস্যাটি দেখে কতদিনে সমাধান সম্ভব তা ব্যবহারকারীকে জানাবেন। অভিযোগ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে সমাধানের সম্ভাব্য সময় জানানো হবে। জবাব জানাতে ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি জেনে যাবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সমাধান না পেলে সবশেষে বিষয়টি অভিযোগ হিসেবে চলে যাবে উত্তর সিটির মেয়রের কাছে।

উল্লিখিত আটটি বিভাগ ছাড়াও সেখানে সরকারি সেবা সংস্থার বিভিন্ন কল সেন্টারের জরুরি নম্বরগুলো দেয়া রয়েছে। যেমন- সরকারি তথ্যের জন্য ৩৩৩, জরুরি সেবা ৯৯৯, দুদক ১০৬, দুর্যোগের আগাম বার্তার জন্য ১০৯০। এছাড়া নিকটবর্তী সেবার আওতায় পার্কিং, গ্যাস, স্টেশন, পাবলিক টয়লেট, হাসপাতাল, এটিএম বুথ, পার্ক, থানা, ফায়ার সার্ভিস, কমিউনিটি সেন্টার, এসটিএস, ফার্মেসি ইত্যাদি তথ্যও রয়েছে।

গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এই অ্যাপটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘সবার ঢাকা একটি অসাধারণ ডাইনামিক অ্যাপ্লিকেশন। যার মাধ্যমে নাগরিকসেবা সম্পর্কিত যে কোনো অভিযোগ পাঠাতে পারবেন। গুগল ম্যাপে লোকেশন ট্র্যাক করে সেই সমস্যার সমাধান করবেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।’

 

চিত্রদেশ//এইচ//

Related Articles

Back to top button