প্রধান সংবাদসারাদেশ

বিপদসীমার উপরে তিস্তার পানি, রেড অ্যালার্ট জারি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তার বাম তীরে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র রোববার এই তথ্য জানিয়েছে।

রাত ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫৩ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার। সকাল ৯টায় ১৫ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২টায় ২০ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হয়। ব্যারাজটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা গেছে, তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় উজানের সামান্য ঢলেই তিস্তার দুই তীর প্লাবিত হয়ে লালমনিরহাটে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক হাজার পরিবার। গত শুক্রবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে উজানে ভারতের পাহাড়ি ঢলের মাত্রা বেড়ে যায়। তা অব্যাহত থেকে রোববার রাত ৯টায় আরও বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাই ব্যারেজ রক্ষার্থে ফ্লাড বাইপাসের উপর দিয়ে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করতে তিস্তা পাড় এলাকার অধিবাসীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং শুরু করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

পানির স্রোত বেড়ে যাওয়ায় জেলার নদী তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাসের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে ফ্লাড বাইপাসের ভাটিতে থাকা মানুষজনকে অন্যত্র সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটলেও কেউ কেউ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ সতর্কতাকে অবজ্ঞা করে ঘরেই মাচাং বানিয়ে থাকছে।

তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালীগঞ্জ উপজেলার চর বৈরাতী, ভোটমারী, কাকিনা, হাতীবান্ধা উপজেলার সিদুর্ণা, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ধুবনী, ডাউয়াবাড়ি এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের লক্ষাধিক পরিবার তিন দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে এসব এলাকার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চর এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় চতুর্থ দফা বন্যার কারণে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট, বিশুদ্ধ পানির অভাবে ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগব্যাধি।

হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ও সিন্দুর্না ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব পরিবার স্থানীয় বাঁধে তাঁবু টাঙিয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। পরিবারগুলোর মাঝে এখনও কোনো সরকারি সাহায্য পৌঁছায়নি।

তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি শুক্রবার দুপুর থেকে বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার রাত ৯টায় বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি আরও বৃদ্ধি পেলে ফ্লাড বাইপাসের উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। তাই ভাটিতে থাকা জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। এরপরও যদি কেউ থেকে যায় তার দায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নেবেন না। চলমান এ বন্যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই।

চিত্রদেশ//এফ//

 

Related Articles

Back to top button