অপরাধ ও আইনপ্রধান সংবাদ

‘প্রতারক’ সাহেদ-সাবরিনার ব্যাংক হিসাব জব্দ

স্টাফ রিপোর্টার:
করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম এবং জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা এ চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। এর পাশাপাশি তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য ৭ দিনের মধ্যে জানানোর জন্য সব তফসিলি ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এনবিআরের সিআইসি থেকে রোববার বিকেলে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য সব ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ডা. সাবরিনা চৌধুরীর স্বামী জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক চৌধুরী ও রিজেন্ট হাসপাতালের পরিচালক ইব্রাহিম খলিলের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের সিআইসির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কর নথিতে থাকা তাদের আয়-ব্যয় খতিয়ে দেখতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এসব ব্যক্তির পাশাপাশি তাদের প্রতিষ্ঠানও এনবিআরের নজরদারিতে রয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতাল, রিজেন্ট কেসিএস, জেকেজি হেলথকেয়ার, ওভাল গ্রুপ লিমিটেডের যাবতীয় ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ওভার গ্রুপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা এ চৌধুরী।
করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে জেকেজি (জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার)-এর নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানকে আটক করেছে পুলিশ। আর করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়া, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। হাসপাতালটির চেয়ারম্যান সাহেদকে খুঁজছে পুলিশ।
জেকেজির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল এবং নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দিত।
এ বিষয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২২ জুন জেকেজি হেলথকেয়ারের সাবেক গ্র্যাফিকস ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফকেও গ্রেফতার করা হয়।
এ ঘটনার পর ২৪ জুন জেকেজি হেলথকেয়ারের নমুনা সংগ্রহের যে অনুমোদন ছিল তা বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

জানা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই জেকেজি প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ৪৬০ টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করে।

পুলিশ জানিয়েছে, জেকেজি হেলথকেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনার টেস্টের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনার আইইডিসিআরের মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপে তৈরি করা হয়। জব্দ করা ল্যাপটপে এর প্রমাণ মিলেছে। আরিফ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান, জেকেজির ৭-৮ কর্মী ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করেন।

জেকেজির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা উপসর্গ দেখা দেয়া মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতেন। প্রতি রিপোর্টে ৫-১০ হাজার টাকা নেয়া হতো। আর বিদেশিদের কাছ থেকে নেন ১০০ ডলার। সেই হিসাবে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্টে প্রায় ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জেকেজি।

২৪ জুন জেকেজির গুলশান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতারক আরিফসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দুদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জেকেজির কার্যালয় থেকে ল্যাপটপসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় চারটি মামলা হয়েছে।এসব মামলা সাবরিনাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে করোনা টেস্ট নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে প্রথমেই উঠে আসে রিজেন্ট হাসপাতালের নাম।

আদালতে পুলিশের দেয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিজেন্ট চেয়ারম্যান সাহেদ একজন ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু ও পাষণ্ড প্রকৃতির লোক। অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রশ্নে তার কাছে মানুষের জীবনের কোনো মূল্যই নেই।

তিনি তার সহযোগীদের সহায়তায় কোভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট ও চিকিৎসা উভয় ক্ষেত্রেই প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কোনো রোগী প্রতারণার কথা বুঝতে পেরে প্রতিবাদ করলে তিনি বিভিন্নভাবে তাদের হুমকি দিতেন।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষার ফর্মে পরীক্ষা বিনামূল্যে করার কথা উল্লেখ থাকলেও প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা এবং পুনরায় পরীক্ষার জন্য ১ হাজার টাকা করে নিতেন তিনি।

এছাড়া আইসিইউ ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি রেখে মোটা অংকের অর্থ আদায় করতেন। তিনি প্রায় ছয় হাজার রোগীর কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে পরীক্ষার ফি বাবদ প্রতারণার মাধ্যমে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এছাড়াও চিকিৎসায় প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি ও ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে সরল রোগীদের কাছ থেকে ২০ মার্চ থেকে অদ্যাবধি প্রায় তিন থেকে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

বিনামূল্যে কোভিড-১৯ সেবার নামে প্রতারণা : সরকারের কাছ থেকে টাকা নেবে, বিনিময়ে জনগণকে বিনামূল্যে সেবা দেবে বলে ১২ মে রিজেন্ট হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তি করে।

রোগীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ টাকা নেয়া সত্ত্বেও রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে ১ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রাপ্তির জন্য বিল দাখিল করে।

চিত্রদেশ//এফ//

 

Related Articles

Back to top button