আন্তর্জাতিকপ্রধান সংবাদ

‘নতুন রূপে করোনা’ দ্রুত ছড়াচ্ছে, কমেছে মৃত্যুঝুঁকি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রথম ধাক্কা ইতোমধ্যে পার করেছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রূপের করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবর্তিত এই করোনা ভাইরাস আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে মানবদেহে সংক্রমিত হচ্ছে। তবে পরিবর্তিত ওই করোনা ভাইরাস মানুষকে আগের মতো গুরুতর পর্যায়ের অসুস্থতায় ফেলতে পারছে না।যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লা জোলা ইনস্টিটিউট ফর ইমিউনোলজির নতুন এক গবেষণায় এমন দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের খবরে ওই গবেষক দলের বরাত দিয়ে বলা হয়, পরিবর্তিত রূপের এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও অসুস্থ করার ক্ষমতার বিষয়ে শক্ত প্রমাণ ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী ‘সেল’ এই গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছে।

বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সেলে প্রকাশিত এই গবেষণা কিছু পূর্ববতী কাজের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়; যা চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রি-প্রিন্ট সার্ভারে প্রকাশ হয়েছিল। গবেষকদের জেনেটিক সিকোয়েন্স সম্পর্কিত তথ্যে ভাইরাসটির একটি নির্দিষ্ট সংস্করণে রূপান্তরের ইঙ্গিত মিলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষক দল শুধু জেনেটিক সিকোয়েন্সই পরীক্ষা করেনি বরং তারা ল্যাবে মানুষ, প্রাণী এবং কোষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। এতে দেখা যায়, ভাইরাসটির রূপান্তরিত সংস্করণটি আরও বেশি সাধারণ এবং অন্যান্য সংস্করণের চেয়ে বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে। গবেষক এরিকা ওলমান সেফিরে বলেন, আমরা জানি, নতুন ভাইরাসটি নিজেকে অভিযোজিত করতে পারে।

ভাইরাসটির রূপান্তর স্পাইক প্রোটিনকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ এটি যে কাঠামো ব্যবহার করে সংক্রমিত কোষে প্রবেশ করে তাতে প্রভাব ফেলে। ভ্যাকসিন দ্বারা ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা- এখন গবেষকরা সেটি পরীক্ষা করে দেখছেন।

বর্তমান যেসব ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হয়েছে, সেসবের অধিকাংশই স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করে পরীক্ষা করা হয়েছে; কিন্তু এসব ভ্যাকসিন ভাইরাসটির পুরনো স্ট্রেইন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। গবেষকরা করোনা ভাইরাসের নতুন রূপান্তরকে জি৬১৪ বলেছেন। তারা দেখেছেন, ইউরোপ এবং আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির ডি৬১৪ নামের প্রথম সংস্করণকে প্রায় পুরোপুরি প্রতিস্থাপিত করেছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছে, করোনা ভাইরাস অন্যান্য ফ্লু ভাইরাসের তুলনায় ধীর গতিতে পরিবর্তিত হয়। শুরুতে জি ও ডি উভয় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে জি স্ট্রেন আরও বেশি প্রভাবশালী ছিল। পরীক্ষায় দেখা যায়, নতুন জি ভাইরাসটি নিরপেক্ষ ছিল এবং মাঝে মধ্যে মূল ডি ভাইরাসের মতোই ছিল। এর অর্থ দাঁড়ায় করোনা প্রতিরোধে জি ভাইরাসের জন্য আলাদা অ্যান্টিবডির প্রয়োজন নেই।

ওই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গবেষণা সংস্থা লা জোলা ইনস্টিটিউট ফর ইমিউনোলজির গবেষক এরিকা ওলমান সেফিরে। তিনি দ্য করোনা ভাইরাস ইমিউনোথেরাপি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গেও জড়িত। গবেষক সেফিরে বলেন, ‘নতুন রূপের করোনা ভাইরাস আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে মানুষকে সংক্রমিত করছে। তবে এটা আগেরগুলোর মতো ভয়াবহ নয়।’

অধ্যাপক সেফিরে বলেন, ভাইরাসগুলো প্রায়শই আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা সৃষ্ট অ্যান্টিবডিগুলোকে রূপান্তরিত করে।

লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির সহযোগী সিনিয়র লেখক ড. বেটে কোরবার বলেন, এই আবিষ্কারগুলো প্রমাণ করে ভাইরাসটির নতুন রূপ মূল ফর্মের চেয়ে আরও সহজেই সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

চিত্রদেশ//এস//

Related Articles

Back to top button