কর্পোরেট সংবাদপ্রধান সংবাদ

দেশের প্রথম বিটুমিন প্ল্যান্টের উদ্বোধন করল বসুন্ধরা

স্টাফ রিপোর্টার:
দেশের প্রথম বিটুমিন উতপাদনকারী কারখানা উদ্বোধন করল বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বসুন্ধরা বিটুমিন প্ল্যান্ট।

সড়ক নির্মাণে উন্নত বিটুমিনের যোগান দিতে ‘রোড টু দ্যা ফিউচার’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে এ প্রকল্পটি নিয়ে আসে দেশের নিয়ে অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।

আজ শনিবার(২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে গড়ে ওঠা বিটুমিন প্ল্যান্টটির উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। উদ্বোধনের পরপরই উৎপাদন শুরু করে বিটুমিন প্ল্যান্টটি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও এমডি।

সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত বিটুমিন মূলত একটি হাইড্রোকার্বন পণ্য। বিটুমিন জ্বালানি তেলের একটি বাই-প্রোডাক্ট। এটি মূলত রাস্তাঘাট নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশে বছরে বিটুমিনের চাহিদা কয়েক লাখ টন। এর প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি ৭০ হাজার টন উৎপাদন করে। বাকি বিটুমিন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে প্রায়ই বিদেশ থেকে নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি করে সড়কে ব্যবহারের কারণে সড়ক টেকসই হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় দেশেই সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন বিটুমিন উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে নতুন প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গ্রুপের বিটুমিন প্ল্যান্ট থেকে বছরে সাড়ে ৮ লাখ টন বিটুমিন ও পিচ উৎপাদন হবে।

বসুন্ধরা গ্রুপের চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিমেন্ট সেক্টর) খন্দকার কিংশুক হোসাইন জানান, দেশের উন্নয়নের জয়যাত্রায় অংশীদার হতেই বসুন্ধরা গ্রুপ বিটুমিন প্ল্যান্ট চালু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিশেষ করে সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণে বিটুমিনের চাহিদা পূরণে এই প্ল্যান্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর আমরা উৎপাদিত উচ্চমানের বিটুমিন বিদেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছি। দেশের চাহিদা বাড়লে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে বসুন্ধরা বিটুমিন প্ল্যান্টে।

তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে বিটুমিনের চাহিদা প্রায় ৫ লাখ টন, এর ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। বাকি ১০ শতাংশ বিটুমিন সরবরাহ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্টার্ন রিফাইনারি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল অনুযায়ী টেকসই হচ্ছে না। এতে দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে প্রতি মাসে বিটুমিনের চাহিদা প্রায় ৪২ হাজার টন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হওয়ায় প্রতি বছর এর চাহিদা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। সড়কে ব্যবহারের জন্য পেনেট্র্যাশন গ্রেডের বিটুমিন উৎপাদন ছাড়াও বসুন্ধরা বিটুমিন প্ল্যান্টে প্রিমিয়াম মানের পিচ উৎপাদনের সক্ষমতাও রয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কাটব্যাক, ইম্যুলসিফাইড, অক্সিডাইজড ও পলিমার (এসবিএস, রাবার পাউডার) উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সাধারণ পেনেট্র্যাশন গ্রেড (৬০-৭০/৮০-১০০) ও উন্নত গ্রেডের বিটুমিন চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, এতদিন বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী গুণগতমানসম্পন্ন বিটুমিন উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। আমদানিকৃত বিটুমিন দিয়ে তৈরি করা রাস্তা সময় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে বিটুমিন উৎপাদনের এই উদ্যোগকে অসাধারণ বলে আখ্যা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এই কারখানা সংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শুধু বসুন্ধরা নয় সরকারি সহযোগিতায় পুরো বেসরকারিখাত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী আরো জানান, অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সাথে আমার আলোচনা হচ্ছিল। একসাথে তিন লাখ জনশক্তি কাজ করতে পারবে এমন একটি কারখানায় তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বসুন্ধরা চেয়ারম্যান। অর্থমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের মিরেরসরাই ইকোনমিক জোনে আমাদের অনেক জায়গা আছে সেখানেই তৈরি হবে সে কারখানা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বেসরকারি খাতের অবদানে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। পাওয়ার সেক্টরেও তার কোন বিকল্প নেই। বেসরকারি খাতের অবদানে পাওয়ার সেক্টর এর গতি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের মতো অন্যান্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

 

চিত্রদেশ//এইচ//

Related Articles

Back to top button