স্বাস্থ্য কথা

থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ ও কোভিড-১৯ এর প্রভাব

স্টাফ রিপোর্টার: বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ও বিশ্ব থাইরয়েড দিবস-২০২০ উপলক্ষে দি থাইরয়েড সেন্টার লি এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ এ. কে. এম ফজলূুল বারী, থাইরয়েড বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক, নিনমাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তার অনলাইন ভিডিও বার্তায় বলেন থাইরয়েড গ্রন্থি’ শরীরের অতি প্রয়োজনীয় একটি গ্রন্থি’ যা থেকে থাইরক্সিন (টি থ্রী) এবং আয়োডোথাইরোনিন (টি ফোর) নামক দুইটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসরণ হয়।

এই হরমোনের মাধ্যমে শরীরের বিপাক ক্রিয়া, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন, শারিরীক ও মানসিকবৃদ্ধি সহ ক্যালসিয়াম এর বিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ (প্রায় ২ কোটি) মানুষ থাইরয়েড গ্রন্থি’র বিভিন্ন রোগে ভুগছে। থাইরয়েড গ্রন্থিতে সাধারণত প্রদাহ/থাইরোডিটিস,হাইপোথাইরয়েডিজম , হাইপারথাইরয়েডিজম, গয়টার /ক্যান্সার রোগ হয়ে থাকে ।

কোভিড-১৯ নতুন ধরণের করোনা ভাইরাস যা বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে। এই রোগটি মূলত শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে অকার্যকর করে দেয় , কোভিড-১৯ সাধারণত হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। যেহতু কোভিড-১৯ নতুন ভাইরাস তাই এটি থাইরয়েড গ্রন্থি’র রোগ সমূহকে কিভাবে প্রভাবিত করে তা এখনো পরিষ্কার নয়।

দি জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড মেটাবলিজম এ প্রকাশিত নতুন স্ট্যাডি তে জানা গেছে যে কোভিড-১৯ রোগীদের থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ হতে পারে।

হাইপোথাইরয়েডিজম রোগীদের বিশেষ করে যেসব রোগী থাইরয়েড রোগ নিয়ন্ত্রনহীন, প্রথম থাইরয়েড এর ওষুধ সেবন শুরু করেছেন বা নিয়মিত ওষুধ খান না তাদের কোভিড-১৯ ইনফেকশন হলে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে ।

হাইপোথাইরয়েডিজম এর মূল কারণ হাসিমোটো থাইরয়েডিজম, এটি একটি ইমিউন ডিজিস যা প্রাইমারি ইমিউন ডিসঅর্ডার (পিএইডি ) এর সাথে থাকতে পারে, এই সকল রোগীদের কোভিড-১৯ ইনফেকশন হলে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

হাইপারথাইরয়েডিজম রোগীদের এন্টি থাইরয়েড ড্রাগ ব্যবহার করলে অগ্রানুলোসাইটোসিস হতে পারে যা কোভিড-১৯ এর উপসর্গের মতো, যেমন: গলা ব্যথা,কাশি,জ্বর,শরীর ব্যথা। এক্ষেত্রে ওষুধের সাথে সাথে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা খুবই জরুরী। থাইরয়েড রোগের ঔষধ সমূহ ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে না, থাইরয়েড হরমোনের জন্য চোখে যাদের সমস্যা আছে এবং বেশী ডোজ স্টেরয়েড খায় তাদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ ইনফেকশন এর রিস্ক বেড়ে যায়।

কোভিড-১৯ প্রকোপের সময় যে সকল রোগীদের বিনাইন থাইরয়েড নডিউল রয়েছে, তাদের সার্জারি, রেডিও আয়োডিন থেরাপি দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করার জন্য বলা ভাল ।

বৃটিশ থাইরয়েড এসোসিয়েশন (বিটিএ) এর এক গবেষণা থেকে জানা যায় সার্স ভাইরাস (সার্স থাইরয়েড) এ আক্রান্ত রোগীদের থাইরয়েড হরমোন -টি থ্রী ও টি ফোর লেভেল কমে যায়, কারণ থাইরয়েড ফলিকুল ও ফলিকুলার সেল নষ্ট হয়ে যায়।

যে সব রোগীদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল যেমন: লিউকোমিয়া,এইচ.আই.ভি, এইডস , রেইমাটিড অর্থেরাইসিস , কেমোথেরাপি, অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন, ক্রনিক ডিজিজ, ক্যান্সার এ সকল রোগে আক্রান্ত রোগীদের ও বৃদ্ধদের ইনফেকশন হলে তা জঠিল আকার ধারণ করবে এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

প্রতিরোধই কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ হতে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। আর সে জন্য প্রতিটি মানুষের উচিত মাস্ক ব্যবহার করা, ক্যারিয়ার মাস্ক ব্যবহার না করলে সেক্ষেত্রে সুস্থ ব্যাক্তি মাস্ক ব্যবহার করলেও ৭০% সংক্রমণের আশংকা থেকে যায়। কিন্তু ক্যারিয়ার ও সুস্থ ব্যাক্তি উভয়ই মাস্ক ব্যবহার করলেও ১.৫% সংক্রমণের আশংকা থাকে । এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা। সেই সাথে থাইরয়েড রোগীদের নিয়মিত ওষুধ সেবন ও চিকিৎসার যত্নবান হওয়া উচিত।

২৫শে মে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস:

বিশ্ব থাইরয়েড দিবস-২০২০ এর প্রতিপাদ্য বিষয় সমুহঃ

১.থাইরয়েড রোগ ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা ।

২. থাইরয়েড স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম ।

৩.থাইরয়েডের আধুনিক চিকিৎসা বিষয়ে জনসাধারণ কে অবহিত করা।

দি থাইরয়েড সেন্টার লি. বাংলাদেশে বরাবরের ন্যায় “বিশ্ব থাইরয়েড দিবস ২০২০” উদযাপন করছে।

লেখক: অধ্যাপক ডাঃ এ.কে.এম ফজলুল বারী
ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এান্ড অ্যালায়েন্স সায়েন্সেস,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
থাইরয়েড মেডিসিন ও ইন্টারভেনশনাল বিশেষজ্ঞ
এবং চেয়ারম্যান, দি থাইরয়েড সেন্টার লিঃ ও বিটমির ।

চিত্রদেশ//এল//

 

Related Articles

Back to top button