অর্থ-বাণিজ্যপ্রধান সংবাদ

চাল রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার:
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে চাল রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা (ভর্তুকি) দেবে সরকার। বৃহস্পতিবার বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক সার্কুলারে ৩০ জানুয়ারি থেকে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে (২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত) চাল রপ্তানিতে এ হারে প্রণোদনা দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশে উৎপাদিত ধান সংগ্রহের মাধ্যমে নিজস্ব কারখানায় প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপাদিত চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে নিট এফওবি মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে প্রক্রিয়াকারী-রপ্তানিকারক ভর্তুকি প্রাপ্য হবে। তবে বিশেষায়িত অঞ্চলে (ইপিজেড, ইজেড) অবস্থিত প্রতিষ্ঠান থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে আলোচ্য সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।

সামগ্রীসহ অন্যান্য উপকরণের ওপর ডিউটি ড্র-ব্যাক ও শুল্ক বন্ড সুবিধা গ্রহণ করা হলে ভর্তুকি সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। ভর্তুকির আবেদনপত্র বিদেশে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নস্ট্রো হিসাবে রপ্তানিমূল্য আকলনের (রফতানিমূল্য প্রত্যাবাসনের) তারিখের ১৮০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক শাখায় দাখিল করতে হবে।

তবে একই রপ্তানির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন চালানের মাধ্যমে রপ্তানির বিপরীতে ভর্তুকির আবেদনপত্র দাখিলের বিষয়ে এফই সার্কুলার নং ১২, তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১২ এর নির্দেশনা অনুসরণীয় হবে। প্রতিটি রপ্তানির স্বপক্ষে আবেদনপত্রের সঙ্গে যথাযথ সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র থাকতে হবে।

রপ্তানি ভর্তুকির আবেদন ফরমের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে যেসব কাগজপত্র, সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্রের উল্লেখ আছে সেগুলো সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ আকারে আবেদনের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক প্রাথমিক পরীক্ষণে নিশ্চিত হবে।

ভর্তুকির আবেদনপত্রের সঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে সংযোজিত ছক (ফরম-খ) মোতাবেক সনদপত্র দাখিল করতে হবে। ভর্তুকি পরিশোধ নিষ্পত্তি সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনের/সরকারি বাণিজ্যিক নিরীক্ষা বিভাগের পরীক্ষণের জন্য পরিশোধের তারিখ হতে অন্যূন তিন বছর পর্যন্ত শাখায় সংরক্ষণ করতে হবে।

এদিকে বিধি-বহির্ভূতভাবে ভর্তুকি পরিশোধ করা হলে পরিশোধকৃত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রক্ষিত পরিশোধকারী ব্যাংকের হিসাব বিকলনপূর্বক আদায় করা হবে। সংঘটিত অনিয়মে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংঘটিত অনিয়মের সঙ্গে রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের কোনো কর্মকর্তা যুক্ত থাকলে অথবা মিথ্যা তথ্য দিয়ে অনিয়মে সহযোগিতা করলে রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন/কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে। সরকারি বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে ছাড়কৃত তহবিল থেকে ভর্তুকির জন্য দাখিলকৃত আবেদনের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অর্থ প্রদান করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, অনেক দিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। মূলত কৃষকদের সহায়তা করতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বাজারে চালের দামে এর প্রভাব পড়বে কি না সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। পর্যাপ্ত চালের মজুদ আছে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, বেশ কিছু দিন ধরেই চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। দাম বাড়েনি। বিশেষ করে মোটা চালের দাম একটুও বাড়েনি। তার প্রমাণ টিসিবির চাল বিক্রি করতে গেলে ক্রেতা পাওয়া যায় না। তাছাড়া গ্রামে কৃষি জমির দাম অনেক কমে গেছে। জমি বিক্রি করতে গেলে ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যায় না। সার্বিকভাবে কৃষকদের সহায়তা করতেই এই ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান বলেন, শুধু প্রণোদনার সিদ্ধান্ত নিলে হবে না, যে কৃষকদের কারণে এটা দেওয়া হচ্ছে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ প্রণোদনার কারণে চালের যে দাম বাড়বে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধানের দাম বাড়বে কি না? আর বাড়লেও সেই বাড়তি দাম প্রকৃত কৃষকরা পাবেন কি না, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টিতে নজরদারি না করলে দেখা যাবে, মিল মালিক ও গুটি কয়েক রপ্তানিকারক ভর্তুকি বা প্রণোদনার টাকা পাবেন। কৃষকরা কিছুই পাবে না। সেক্ষেত্রে দেখা যাবে, ‘তেলে মাথায় তেল দেওয়াই হয়ে গেল আরকি।

আসাদুজ্জামান আরো বলেন, আর আরেকটি বিষয় হল বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ তো আতপ চাল খায়। আমরা সিদ্ধ চাল উৎপাদন করি। আমাদের এই চাল কেউ আদৌ কিনবে কি না সে বিষয়েও সন্দেহ আছে।

সব মিলিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত কতটা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে, তা নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এই গবেষক।

 

চিত্রদেশ//এইচ//

 

Related Articles

Back to top button