স্বাস্থ্য কথা

করোনাভাইরাসে প্রবীণরা যেদিকে খেয়াল রাখবেন

স্বাস্থ্য কথা:
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন প্রবীণরা।

বিলকিস চৌধুরী (৬২) বলেন, আগে তো হাঁটতে যাইতাম সকালে একবার আর মাগরিবের পর একবার। এখন ভাইরাসের ভয়ে কোথাও যাই না। হাত ধোয়া ছাড়া কিছু ধরি না। মাঝে মাঝে হাতে হেক্সাজল লাগাই। একবার এই ভাইরাস ঢুকলে তো উপায় নাই। উন্নত দেশই ঠেকাইতে পারতেসে না। তাই নিজেরা সাবধান হওয়াই ভাল।

চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্রের তথ্যমতে, মধ্য বয়সীদের চাইতে বয়স্করা অর্থাৎ যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্তত ১০ গুন বেশি থাকে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২৮ ভাগের বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রধান দুটি কারণ হল, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে থাকে এবং ফুসফুসও সহজে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে।

এছাড়া যাদের আগে থেকেই জটিল বিভিন্ন অসুস্থতা রয়েছে, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ-রক্তচাপ, ফুসফুসে প্রদাহ, কিডনি জটিলতা, তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস প্রাণঘাতী হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সাইফ উল্লাহ মুনসী।

তিনি বলেন, বয়স পঞ্চাশ হওয়ার পর অনেকের ডায়াবেটিস, হাইপার-টেনশন, অ্যাজমার সমস্যা দেখা দেয়। এতে ফুসফুস দুর্বল হয়ে যায়। আর করোনাভাইরাস ফুসফুসকে সংক্রমিত হয়। যার কারণে বয়স্করা এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, তারাই বেশি মারা যাচ্ছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যারা সেরে উঠছেন, সেটা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকার কারণে সম্ভব হয়েছে বলে জানান মি. মুনসী।

তিনি বলেন, তরুণ বয়সীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল, তাদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতাও ভালো। এজন্য এই ভাইরাস তাদের বেশি কাবু করতে পারছে না। কিন্তু বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমেই দুর্বল হতে থাকে। এতে সহজেই তাদের রোগ সংক্রমণ হয়।

এমন অবস্থায় প্রবীণদের সতর্কভাবে চলার পরামর্শ দিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগ আইইডিসিআর’র পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে যেমন বারবার হাত ধোয়া, হাঁচি/কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, মাস্ক পরা ও মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

তার পাশাপাশি বয়স্কদের বিশেষভাবে বলা হচ্ছে তারা যেন খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হন এবং অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলেন।

এছাড়া নবীনদেরও তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যেন তারা শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে প্রবীণদের সঙ্গে দেখা না করেন।

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বয়স্ক মানুষ বা যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তাদের সতর্ক থাকা খুব জরুরি। সবাইকে আমরা যেসব পরামর্শ দিয়েছি তারা সেগুলো মেনে চলার পাশাপাশি অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে জনসমাগম স্থান এড়িয়ে চলবেন। বাইরে থেকে কেউ এলে কিংবা অসুস্থ কারো সাথে থেকে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো তাদের সাথে দেখা না করলে।

ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ৭৭ শতাংশের বয়স ৭০-৮৯ বছরের মধ্যে। এবং ১০ ভাগের বয়স ৫০-৬৯ বছরের মধ্যে। পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের চিত্রও প্রায় একই।

তাই প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নাজুক হওয়ার কারণে সতর্ক হয়ে চলার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

 

চিত্রদেশ//এস//

Related Articles

Back to top button