গল্প-কবিতা

আমার একেকটা কবিতা, একেকটা গল্প, একেকটা উপন্যাস হবে: শেখ নজরুল

শেখ নজরুল। কবি ও গীতিকার। এবারের বইমেলায় এসেছে তার তিনটি নতুন বই। ‘বঙ্গবন্ধু শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি’, কাব্যগ্রন্থ ‘রাখাল বালক সুবর্ণ চাষা’ ও ‘কবিতাসমগ্র’।
এ পর্যন্ত লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪৬। লিখেছেন তিনশ’র মতো গান। পেয়েছেন শেরেবাংলা স্বর্ণ পদক (১৯৯৩), সাতক্ষীরা জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরুস্কার (২০০৯), স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০১২)।
শেখ নজরুলের জন্ম সাতক্ষীরার দেবহাট্টা উপজেরার জগন্নাথপুর গ্রামে। পেশায় চাকরিজীবি হলেও নেশায় সাহিত্যিক। লেখালেখির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব বোধ থেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন অনেকগুলো বই। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনেক বই।

সম্প্রতি কবি ও গীতিকার শেখ নজরুল-এর সঙ্গে কবিতা ও সাহিত্যের নানান দিক নিয়ে কথা হয় ‘চিত্রদেশ’ এর সঙ্গে। পাঠকদের জন্য তাঁরই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো।

সাক্ষাতকার নিয়েছেন- শেখ লাভলী হক লাবণ্য

 

 

চিত্রদেশ: এবারের বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে?

শেখ নজরুল: তিনটি। ২০০ কবিতা নিয়ে একটি মৌলিক কবিতার বই। ‘রাখাল বালক সুবর্ণ চাষা’। অন্যটি ‘কবিতা সমগ্র’ ১০০০ কবিতা নিয়ে। আরেকটি প্রবন্ধ ‘বঙ্গবন্ধু শ্রেষ্ঠ বাঙালী’ সম্পাদিত বই। এটা বঙ্গবন্ধুর যে শতবর্ষ উদযাপন হবে সে উপলক্ষে প্রকাশিত হবে। তিনটি বই ই পারিজাত প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে।

চিত্রদেশ: ‘বঙ্গবন্ধু শ্রেষ্ঠ বাঙালী’ বইটির বিষয় বস্তুু যদি পাঠকদের একটু বলতেন?
শেখ নজরুল: মূলত ‘বঙ্গবন্ধু শ্রেষ্ঠ বাঙালী’ বইটি হলো বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিভিন্ন জনের লেখা আমি সম্পাদনা করেছি।

চিত্রদেশ: আপনার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কি? এ পর্যন্ত আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে?

শেখ নজরুল: আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যতক্ষণ তুমি মাধবী. . . ’ ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয়েছে। এরপর প্রতিবছরই আমার একটি করে বই প্রকাশিত হয়। আমার দ্বিতীয় বই ছিল ‘পাঁজরের মানচিত্রে অনেক নদী’। তৃতীয় বই ছিল- ‘নিষিদ্ধ নমস্কার’ চতুর্থ বই- ‘কষ্টের অনুবাদ’। আমার এ পর্যন্ত ৪৬ টি বই বের হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো – ‘পাজঁরের মানচিত্রে অনেক নদী,’ ‘কষ্টের অনুবাদ,’ ‘মা ও জোনাকতারার কাব্য’, ‘অষ্টধাতুর মাদুলি,’ ‘আমার খুনের তালিকায় জোছনাও আছে’, ‘মলাটবন্দি চেতনার কফিন’,মেঘ সম্পাদনা’, ‘মীমাংসিত মৃত্যু অমীমাংসিত জীবনে,’ ‘নারীনিধি’, ‘রাষ্ট্র বনাম একা,’আপেল কাটা ছুরি,’ ‘গোলালি দরজা,’ ‘পতাকায় ফাল্গুন মানচিত্রে বসন্ত’, ‘লাল মোরগের ঘাড়টান ভোর,’ ‘এখন তুই মাঠ আমি খেলছি’, ‘আমাদের ভদ্র হবার গল্প,’ ‘গোলাপেও দুর্দিন ফোটে’, ‘সোনালি শস্যে রুপোলি সরোবরে,’মন খেলাপি’, ‘বেয়াদবি মাফ করবেন’ ।
ছড়ার বই- ‘কার ঘাড় কে চড়ে’, ‘ফন্দিফিকির’, ‘কাঠমোল্লাা,’ ‘রাজনীতি এ্যটরেট জনগণ ডটকম’, ‘বুকের ভেতর বাংলাদেশ‘, ‘বৃষ্টিকাব্য,’ ‘বন্ধুকাব্য,’ ‘মুঠির ভেতর আগুন ঝরে কার,’ ‘সময়ের কাব্য, হায় পাখি, ছড়া বসন্ত।’
গল্পের বই- ‘গ্লাসভাঙা দুপুর।
আখ্যানকাব্য-‘রাজারকারনামা।’
প্রবন্ধ-‘গল্প রাতে নাটক সকালে’।
তথ্যগ্রন্থ- ‘আন্তর্জাতিক দিবস জাতীয় ভাবনা’
সম্পাদিত গ্রন্থ-‘আমার স্বপ্ন আমার স্বাধীনতা ‘(প্রবন্ধ), ‘কবিতায় বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর কবিতা ‘(কাব্য), ‘দুই বাংলার মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত কবিতা,’ ‘মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত কবিতা,’ ‘মুক্তিযুদ্ধের বাছাই গল্প’।

চিত্রদেশ: আপনি আসলে কোন ধরনের লেখা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

শেখ নজরুল: আমি আসলে কবিতা লিখতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমার একটি মৌলিক প্রবন্ধের বই আছে নাম ‘গল্প রাতে নাটক সকালে’-যেটা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক (যমন-সমকাল, সংবাদ, ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ ) পত্রিকার উপসম্পাদকীয় তে প্রকাশিত হতো। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য লেখা রয়েছে আমার। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার অনেক কবিতাও রয়েছে। আমার লেখালেখির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে প্রকৃতি, নদী, নারী ও মানবতা। আমার একটি গল্পও রয়েছে নাম-‘গ্লাস ভাঙা দুপুর’।

চিত্রদেশ: উপন্যাস লেখা নিয়ে কী ভাবছেন?
শেখ নজরুল: একটি উপন্যাস ও লিখছি। সেটা যদিও এবারই বের করার চিন্তা ছিল। কিন্তু করিনি। উপন্যাসের নাম দিয়েছে ‘হাসবেন্ড অফ মাই মাদার’ আগামি বইমেলায় উপন্যাসটি প্রকাশ করবো।

চিত্রদেশ: আপনার তো অনেকগুলো বই এর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তো এর মধ্যে আপনার প্রিয় বইয়ের নাম গুলো যদি বলতেন?

শেখ নজরুল: বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সম্পাদিত বই ‘বঙ্গবন্ধু শ্রেষ্ঠ বাঙালী’ এটা তো আমার জন্য বিরাট ব্যাপার। আমিতো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখতে খুব পছন্দ করি। আমি প্রায় সাত বছর ধরে প্রতিবছরই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি করে বই প্রকাশ করি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার কয়েকটা বই রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘কবিতায় বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর কবিতা’আমার স্বপ্ন আমার স্বাধীনতা’ ‘দুই বাংলার মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত কবিতা’ ‘মুক্তিযুদ্ধের বাছাই গল্প’ এবং আখ্যানকাব্য ‘রাজারকার নামা’। আর কবিতা হলো আমার ফেসিনেশন এবং আমার একটা রুটিন হলো যে, আমি প্রতিদিন একটি করে কবিতা লিখি। মানে প্রতি বছর যে আমার কবিতার বইটি বের হয় সেটা হলো আমার এই প্রতিদিনের কবিতা নিয়ে প্রতিবছর কবিতার বই প্রকাশিত হয়।

চিত্রদেশ: আমরা তো জানি আপনি গানও লিখেন। আপনার লেখা অনেক গানই ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। আপনি তো মূলত কবি। এই যে হঠাৎ করে গান লিখালিখি কী মনে করে?

শেখ নজরুল: গান তো আসলে কবিরাই লিখবে।

চিত্রদেশ: কিন্তু সব কবিরাই তো আর গান লিখে না। বা লিখতে পারে না?

শেখ নজরুল: সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কী এখন যে সমস্ত কবিতা লেখা হয় তা অধিকাংশই যারা লেখেন তারা কবিতা ছন্দ, জ্ঞান তেমন নিয়ম মেনে লেখেনা। গান তো নিয়ম মেনে লিখতে হয়। মূলত যারা কবিতা নিয়ম মেনে লেখে তারা গান লিখতে পারবে। গান তো নিয়ম মেনে লিখতে হয়। সব কবিরা লেখে না এই কারণে।

চিত্রদেশ: গান লেখাটা কী প্রফেশনালি নেয়ার ইচেছ আছে?

শেখ নজরুল: হ্যাঁ। আমি তো অলরেডি এ পর্যন্ত ৩০০ মৌলিক গান করেছি।

চিত্রদেশ: আপনি কোন ধরনের পাঠকদের কথা মাথায় রেখে কবিতা লেখেন।
শেখ নজরুল: আসলে পাঠকদের তো কোন বয়স নেই। আমি সব ধরণের পাঠকদের জন্যই লিখি। মানুষের জন্য লিখি । জনপ্রিয় হওয়ার জন্য লিখি না।

চিত্রদেশ: কীসের তাগিদে আপনার এই লেখালেখি?

শেখ নজরুল: আমি আমার দায়িত্ব থেকেই লেখালেখি করি। এবং আমার কবিতা যারা জানে, বা যারা পড়ে তারা সবসময় একটা মেসেজ পায়। সেটা পাঠক পড়লেই বুঝতে পারবে। কবিতাগুলোয় একটি মেসেজ রয়েছে এবং খুব চিন্তা ভাবনা করেই আমি কবিতাটা লিখি।

চিত্রদেশ: কার অনুপ্রেরণায় আপনার এই লেখালেখিতে আসা?

শেখ নজরুল: আমি একেবারেই ছোটবেলা থেকে লিখি। আমার বাবাও লিখালিখি করতেন। বাবা যদিও স্কুল শিক্ষক ছিলেন। আমি তো বলা যায় একেবারে ফাইভ/ সিক্সে থেকেই লেখালেখি করি। তাই বলা চলে পারিবারিক অনুপ্রেরণায় আমার লেখালেখিতে আসা।

চিত্রদেশ: আপনার কবিতায় কার প্রভাবটা বেশি পরে। কোন কবির কবিতা দ্বারা কী প্রভাবিত হন?

শেখ নজরুল: আমার সবচেয়ে বড় বিষয় যেটা, সেটা হয়তো অনেকে ডিফার করবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কারো কবিতা পড়ি না। পড়ি না এই কারণে যে, আরো আগে যখন পড়তাম তখন প্রভাব পড়ত। যার কারণে আমি যাতে কারো কবিতা দ্বারা প্রভাবিত না হই। সে কারণে আমি কারো কবিতা পড়ি না। এই জন্য কারো প্রভাব নেই আমার কবিতায়।

-কবি শেখ নজরুল

 

চিত্রদেশ: আপনি একজন প্রমিনেন্ট কবি। কিন্তু কারো কবিতা পড়েন না। বিষয়টা কেমন না?

শেখ নজরুল: একেবারেই পড়িনা বিষয়টা তা নয়। কবিতা তো অনেকেরই পড়ি। তবে সেটা পড়ার জন্য পড়ি। আর আমি মূলত কবিতা লিখি আমার দেখা, আমার জানা, আমার বিবেক, বোধ, চিন্তা ভাবনাই হলো আমার কবিতা লেখার মূল উপজীব্য। আরেকটা বিষয় আমার কবিতায় এমন অনেক শব্দ আছে যেটা ডিকশনারিতে নেই।

চিত্রদেশ: আপনার প্রিয় কবির নাম বলুন পাঠকদের?

শেখ নজরুল: ওয়ার্ডস ওয়ার্থ, শেক্সপিয়ার, সুভাষ মুখপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অমিয় চক্রবতী।

চিত্রদেশ: কেন তাদের কবিতা আপনার ভালো লাগে?
শেখ নজরুল: উনাদের কবিতায় মানুষের কথা থাকে। উনারা মানুষকেই নিয়েই বেশি লিখছেন।

চিত্রদেশ: বর্তমান প্রজন্মের বই পড়া নিয়ে কিছু বলুন?
শেখ নজরুল: এখনকার প্রজন্মের কেউ বই পড়ে না। তার কারণ তাদের পড়ার প্রয়োজন হয় না। এর কারণ এখন তো সবাই ব্যস্ত। কারো সময় নেই। খুবই টাফ সময় যাচেছ। এবং যেহেতু মনোজগতে ইন্টারনেট ঢুকে গেছে। যার কারণে সার্চ দিলেই তো পায়।

চিত্রদেশ: এই বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখছেন?

শেখ নজরুল: যেমন দুই তিনটা বিষয় আমার কাছে খারাপ লাগে । যারা বিদেশে থাকে তাদেরকে আমি অভাগা বলি। যারা বেশি ব্যস্ত । টাকার পিছনে বেশি ছুটে বেড়ায় তাদেরকে ও আমি অভাগা বলি।

চিত্রদেশ: এই যে বই বিমুখ প্রজন্মের বই বিমুখীতা থেকে উত্তরণের উপায়টা জানতে চাচ্ছি?

শেখ নজরুল: এটা থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্র সমাজ ও পরিবারের দায় রয়েছে। আগে যে সামাজিক পরিমন্ডল ছিল। যেমন- যাত্রা, লোকগান, পালাগান, পথ নাটক প্রভৃতিকে এখন শিল্পকলায় অর্ন্তভূক্ত করেছে। আগে যে বিভিন্ন এলাকায় খোলা মাঠে হতো সেটা এখন কোথায় হবে সে ব্যাপারে সরকারের কোন সিদ্ধান্ত নেই। একইভাবে পরিবারও সেভাবে এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছে না। কারণ হলো যে প্রতিযোগিতা। দুই ফ্ল্যাটের দুই বাসিন্দা থাকবে তাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা থাকে। তারা শুধু ছুটছে প্রানান্ত ছুটে চলেছে। সে কারণে পরিবারগুলোও সন্তানদেরকে মানবিক মূল্যবোদ সম্পন্ন তৈরি করতে পারে না। আগেরকার দিনের পরিবারের সন্তানদের যেভাবে সময় দিত সেভাবে এখনকার পরিবারগুলো সময় দিতে পারে না। পরিবারেও তেমন বন্ধন নেই। আর পরিবারের মাধ্যমেই তো গড়ে উঠে সমাজ। আসলে পুরো সমাজ ব্যবস্থাটাই ভেঙ্গে গেছে। যার কারণে সমস্যাটা হয়ে গেছে। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ইন্টানেট।

চিত্রদেশ: নতুন কবিদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

শেখ নজরুল: আসলে পরামর্শ দেয়ার ক্ষমতা তো আমার নেই। আসলে কবিতা নিয়ে বললে আমি বলব, কবিতা খুব চিন্তা ভাবনা করে লেখা হচ্ছে না। যে যার মতো করে লেখে চলেছে। সেটাকে কবিতা বলা যাবে না । সেটা হয়তো তার একটা মনোভাব বলা যেতে পারে। কবিতা তেমন করে লেখা হচ্ছে না। আর নতুনরা যে কবিতা লিখছে আমি তেমন কাউকে দেখিনা। আর বর্তমান সমস্যাগুলো নিয়েও কেউ কবিতা লিখছে না। যেমন-ধর্ষণবিরোধী অনেক কবিতা আমার আছে। সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে আমার অনেক কবিতা রয়েছে।

চিত্রদেশ: বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখালেখি বিষয়ে কিছু বলুন?

শেখ নজরুল: এটা আমি আর্দশগতভাবে করি। এবং আমি একটা জিনিসই শুধু মনে করি যে, যদি এই দেশ স্বাধীন না হতো, আমি বাংলা ভাষায় লিখতে পারতাম না। কথা বলতে পারতাম না। পরাধীন থাকতে হতো। আর আমাদের স্বাধীনতা যে মানুষটির জন্য পাওয়া সেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তো আমার কিছু করতেই হবে। এই মানুষটির জন্য আমরা কিছুই করতে পারি নাই। বঙ্গবন্ধুর জন্য যা করার দরকার তার কিছুই করতে পারি নাই। তাই লেখালেখির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব বোধ থেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই লেখালেখি করা।

চিত্রদেশ: কবিতায় ছন্দ বা উপমার প্রয়োজনীয়তা আছে কী?

শেখ নজরুল: অবশ্যই আছে। কবিতা যখন আসবে তখন তো ছন্দ, মাত্রা, উপমা , গাথুঁনী, বিষয়বস্তু অবশ্যই এগুলো থাকতে হবে। ডিকশনারি ঘেটেঁ ঘেটেঁ একেকটা শব্দ সাজালাম আর কবিতা লিখলাম এটাতো হবে না। আমি কবিতায় কি বলতে চাচ্ছি সে বিষয়টা থাকতে হবে। কী তৈরি হলো আর কীভাবে আমি শেষ করলাম সেটাতো থাকতে হবে। লিখলেই তো আর কবিতা হবে না। ছন্দ, মাত্রা, উপমা তো একটা ফ্যাক্টর। একই সঙ্গে বিষয়বস্তুও থাকতে হবে।

চিত্রদেশ: কবিতায় কী গল্প বলা যায়? কাহিনী কবিতা সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাচ্ছি?

শেখ নজরুল: আমার একেকটা কবিতা, একেকটা গল্প। একেকটা উপন্যাস হবে। এবং আমার লেখা আমি সেভাবেই লেখার চেষ্টা করি।

চিত্রদেশ: এ সময়ের কবিদের কবিতা পড়েন?

শেখ নজরুল: না। সেভাবে পড়া হয় না।

চিত্রদেশ: লিটল ম্যাগাজিন, না ফেসবুক? কোনটা কবিতা ছড়িয়ে পড়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম,আপনার মতে? কেন?

শেখ নজরুল: লিটল ম্যাগ সেভাবে সফল হয়নি। বরং ফেসবুক বা আরো অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলোতে কবিতা ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যম হিসেবে বেশি সফল। লিটল ম্যাগ একটা সময ছিল। কিন্তু তারা ঐভাবে সফল হতে পারেনি। কারন লিটল ম্যাগের একটা নাক উচুঁ ব্যাপার ছিল। সে জন্য ওটার মধ্যে কেউ ঢুকতে পারে নাই। আমি নিজেও লিটল ম্যাগ করেছি। নাম- ‘গন্তব্য’ ও ‘সাতপাঁচ’। লিটল ম্যাগ মাস পিপলদের নিয়ে কাজ করতে পারেনি। যেজন্য মানুষের কাছে ততটা পৌঁছাতে পারে নাই।

চিত্রদেশ: নিজের যে বইটির প্রতি আপনার বিশেষ দূর্বলতা রয়েছে?

শেখ নজরুল: আমার রচিত দুটি বই ‘আমাদের ভদ্র হবার গল্প’ ও ‘সোনালি শস্যে রুপোলি সরোবরে’।

চিত্রদেশ: প্রিয় যে কবিতার পঙক্তি আপনার মাঝে মধ্যে মনে পড়ে?

শেখ নজরুল: ‘আমি কঠিন অসুখে পড়েছিলাম একাত্তরে-অসুখটির নাম ছিল স্বাধীনতা’

চিত্রদেশ: যে কারনে আপনি লেখেন?

শেখ নজরুল: আমার নিজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমি লিখি। আমার ভিতরে যেটুকু আছে সেটা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেই আমি লিখি।

চিত্রদেশ: কবিতায় স্বাধীনতা বলতে আপনি কী বোঝেন?

শেখ নজরুল: কবিতায় স্বাধীনতার ও একটা মাত্রা থাকা উচিত। যেন অন্যকে কোন আঘাত না করে।
চিত্রদেশ: এপার বাংলার কবিতার ভাষা এবং ওপার বাংলা কবিতার ভাষার মধ্যে পার্থক্যে কতটুকু এবং কেন?

শেখ নজরুল: এখনতো পার্থক্যে অনেক বেশি। এপার বাংলায় আমাদের এখানে যারা লেখালেখি করে তাদের ভাষা ভাবগত পার্থক্যে, বিষয়গত পার্থক্যে অনেক। এপার বাংলায় বর্তমানে যারা লেখেন এবসট্র্যাকট ফর্মে বেশি চলে যায়। যার কারণে কোন কোন শব্দের মানে উদ্ধার করতে গেলে কবিকে নিজের এসে বুঝতে হবে।

চিত্রদেশ: কবিতায় পাঠক তৈরিতে কী করা উচিত?

শেখ নজরুল: আবৃত্তি শিল্পী এখন তেমন নেই। যার কারণে কবিতা মানুষের আছে ঠিকমতো পৌঁচ্ছাছে না। না থাকার আরেকটা কারণ হলো আগে যেমন আবৃত্তির ক্যাসেট ছিল। এগুলো উঠে যাওয়াতেই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এখন যেতে হবে ইউটিউবে। ইউটিউবে যাওয়ায় ক্ষমতাতো এখন সবার নেই। শুনবে কোথা থেকে। কবির কবিতা মানুষের কাছে পরিচয় করে দেয়ার জন্য আবৃত্তিকার শিল্পী নেই।

চিত্রদেশ: কবি ও দার্শনিকের মধ্যে পার্থক্যে কী?
শেখ নজরুল: সত্যিকার অর্থে কবি মানেই দার্শনিক।

চিত্রদেশ: কোনটা বেশি টানে বর্ষায় বৃষ্টি। নাকি শরতের নীল আকাশ?
শেখ নজরুল: বর্ষার বৃষ্টি।

চিত্রদেশ: কোনটা ভালো লাগে- পাহাড় নাকি সমুদ্র?

শেখ নজরুল: দুটোই। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে পাহাড়।

চিত্রদেশ: যেভাবে সময় কাটাতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে?
শেখ নজরুল: আমার লেখালেখির ভিতর থাকতেই বেশি ভালো লাগে।

চিত্রদেশ: যে স্বপ্নটি দেখি আসছি দীর্ঘদিন ধরে।
শেখ নজরুল: আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব মানবিক। আমি চাই সব মানুষ খুব মানবিক হবে।

চিত্রদেশ: লেখালেখা নিয়ে আপনার ভবিষৎ পরিকল্পনা কী?
শেখ নজরুল: যা করবো সাহিত্য নিয়েই করবো। কবিতা, গান নিয়ে করবো। স্বপ্ন আছে গান কবিতা নিয়ে কোন একটা মিউজিয়াম করা।

চিত্রদেশ: এতোক্ষণ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
শেখ নজরুল: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

 

চিত্রদেশ//এইচ//

Related Articles

Back to top button